সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রোহিঙ্গা আগমনের ৫ বছর: কুটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে প্রত্যাবাসন

রোহিঙ্গা,ফাইল ছবি

আবদুল আজিজ:
আজ ২৫ আগস্ট। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের ৫ বছর পূর্র্ণ হল। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর গনহত্যা নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ৫ বছর পূর্ণ হলেও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। কুটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো বাড়ছে নানা অপরাধ। একারণে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক। অবশ্য, বরাবরের মত রোহিঙ্গা বলছেন, নিরাপদ পরিবেশ ও নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী।

উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের কলিম উল্লাহর ভাষ্যমতে, ‘দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অনেকটা বন্দি জীবন করছি। তবে বুক ভরা আশা নিয়ে স্বদেশে ফেরার প্রহর গুনছি। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে প্রত্যাবাসন খুব সহসাত হবে’।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ এর ডি-৬ ব্লকের বাসিন্দা হাফেজ আব্দুল মালেক জানান, ‘আমরা মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব চাই। চাই জীবনের নিরাপত্তা। নিজ দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চাই। সন্তানদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এসব সুবিধা নিশ্চিত করলে আমরা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাব। না হয় বাংলাদেশেই জীবন দিয়ে দিব’।

উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এর এফ-১১ ব্লকের হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ মিয়ানমারের কথা বিশ্বাস করতে নেই। তারা ধোকাবাজ। আজ এক কথা, আবার পরে আরেক কথা। মুহুর্তে তাদের রূপ পাল্টায়। আন্তর্জাতিক মহলের এত চাপের মুখেও তারা এখনও মাথা নত করেনি। আমার বিশ্বাস হয় না যে তারা আমাদের ফিরিয়ে নিবে। যদি আমাদের ফিরেও নেয়া হয়, তাহলে নাগরিকত্ব তো দূরের কথা, রাখাইনে ক্যাম্পের মধ্যেই বন্দি জীবন কাটাতে হবে আমাদের’।

উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো: আলম মাঝি বলেন, ‘আজ ৫ বছর কেটে যাচ্ছে, আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন দেখছি না। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এত মানুষ মারল অথচ তাদের কোন বিচার হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজ অনেকটা নিরব’।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া যত দেরি হচ্ছে, তত বাড়ছে নানা অপরাধ। ক্যাম্পের অভ্যান্তরে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপ-গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্রসহ নানা সহিংসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা রয়েছে আতংকে। একই সাথে বাড়ছে নানা অসন্তোষ।

উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মানবিকতা দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এটি খুব সাময়িক। কিন্তু, দীর্ঘ ৫টি বছর এভাবে বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে থাকবে এটি কখনও মেনে নেয়া যায় না। যে কোন কিছুর বিনিময়ে কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরী।’

উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. গফুর উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর রোহিঙ্গাদের এখানে দেখতে চাই না। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে চলে না যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহুর্ত আতংকে কাটছে।’

রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের কথা তুলে ধরে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ মাত্রারিক্ত হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮টি। উক্ত মামলায় আসামীর সংখ্যা ৫ হাজার ২২৬জন। মামলা গুলোর মধ্যে অস্ত্র মামলা ১৮৫টি, মাদক মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি, ধর্ষণ ৮৮টি, হত্যা ১১৫টি, অপহরণ ও মুক্তিপণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯টি। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে আইনশৃংখলা পরিস্তিতির উন্নতির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্য।

কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসু-দ্দৌজা নয়ন জানান, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস অফিস বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে তালিকা পাঠানো হয়েছে। মিয়ানমার তালিকা যাচাই বাচাই করছে।

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগ এনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর শুরু করে গনহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ। তাদের বর্বর অত্যাচার নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখ ১৮ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এ পরিস্থিতিতে গত ৫ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও দেড় লাখের উপরে। শুরু থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং ‘ইউএনএইচসিআর’-এর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য চিকিৎসা সহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪ টি শরনার্থী শিবির প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথমে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, কুটনৈতিক নানা কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে প্রত্যাবাসন খুব সহস হবে এমনটি বলছেন সংশ্লিষ্ট।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION